নাটোরের কাঁচাগোল্লা । Natorer Kaca Golla - Bangladeshi Food Recipes। বাংলাদেশী খাবারের রেসিপি

Hot

বৃহস্পতিবার, ১৬ মে, ২০২৪

নাটোরের কাঁচাগোল্লা । Natorer Kaca Golla

নাটোরের কাঁচাগোল্লা

নাটোরের কাঁচাগোল্লা নাটোরের একটি প্রসিদ্ধ খাবার, যা বিখ্যাত বনলতা সেনের মতো ঐতিহ্যবাহী। এটি রসিক বাঙ্গালীদের মধুর রুচির অবহেলা নয়, এটি একটি আন্তর্জাতিক খাবার হিসেবে পরিচিত। কিন্তু এই মিষ্টান্নটির নাম হল কাঁচাগোল্লা, তবে এটি দেখতে কাঁচা বা গোলাকার নয়। এটি দুধের ছানা ও চিনি দিয়ে তৈরি করা হয়। এই মিষ্টান্নের স্বাদ এবং গন্ধ অতুলনীয়। এর ইতিহাস প্রায় আড়াইশ বছরের পুরানো। মনে করা হয় ১৭৫৭ সালের পর থেকে কাঁচাগোল্লা জনপ্রিয়তা লাভ করে। ১৭৬০ সালে রাণী ভবানীর রাজত্বকালে এটি দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে পড়ে। সেই সময় জমিদারদের মিষ্টি মুখ করার জন্য নাটোরের কাঁচাগোল্লা ব্যবহৃত হত। আবার সুদূর বিদেশের রাজপরিবার এবং ভারতবর্ষেও এটি পরিচিত। রাজশাহী গেজেট এবং কলকাতার বিভিন্ন পত্রিকায় নাটোরের কাঁচাগোল্লা নিয়ে বিভিন্ন ফিচার প্রকাশিত হয়েছিল।



আরও একটি গল্প জনপ্রিয়, রাণী ভবনীর রাজত্বকালে রানীকে নাটোরের লালবাজারের মধুসূদন পাল নামের এক মিষ্টি বিক্রেতা নিয়মিত মিষ্টি সরবরাহ করতেন। একবার দোকানে মিষ্টির কারিগর না আসায় আগের রাতে তৈরি করা দেড় থেকে দুই মন ছানা নিয়ে মধুসূদন চিন্তায় পড়ে গেলেন। তার কষ্টের জন্য তিনি ছানাগুলো রক্ষার জন্য কাঁচা ছানার মধ্যে চিনির রস ঢেলে জ্বাল দিয়ে নামিয়ে রাখলেন। পরবর্তীতে এই চিনি মিশানো ছানা মুখে দিয়ে চমৎকার স্বাদের উপলব্ধি করেন। রানীও অভিভূত হয়ে ধন্য ধন্য করতে লাগলেন। এরপর নতুন এই মিষ্টির নাম কাঁচাগোল্লা হয়ে উঠল।

নাটোরের কাঁচাগোল্লা প্রায় সবত্র পাওয়া যায়, তবে উল্লেখযোগ্য দোকান থেকে কিনা ভালো। নাটোরের শহরের কালীবাড়ি নামক আবাসিক এলাকার ভিতরের মন্দিরের সামনের জরাজীর্ণ দোকানটি নাটোরের সেরা কাঁচাগোল্লা দোকান। এছাড়া নীচা বাজারের কুণ্ডু মিষ্টান্ন ভান্ডার, অনুকূল দধি ও মিষ্টান্ন ভাণ্ডার, ষ্টেশন বাজারের নয়ন ও সকাল সন্ধ্যা, বনলতা মিষ্টান্ন ভান্ডার, দাবপট্টি মিষ্টান্ন ভান্ডার এবং ষ্টেশন বাজার রেলগেটের জগন্নাথ মিষ্টান্ন ভান্ডার থেকেও ভালমানের কাঁচাগোল্লা কিনতে পারবেন। বর্তমানে কাঁচাগোল্লা বিক্রিতে মৌচাক মিষ্টান্ন ভাণ্ডার অনেক জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। পূর্বে প্রতি সেরের কাঁচাগোল্লার দাম ছিল ৩ আনা, তবে বর্তমানে এক কেজি কাঁচাগোল্লার দাম ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা।

ঢাকা থেকে নাটোরে যাওয়ার জন্য সড়ক এবং রেলপথ উভয়ই সম্ভব। ঢাকার কল্যাণপুর ও গাবতলী থেকে হানিফ, ন্যাশনাল ট্রাভেলস, দেশ ট্রাভেলস, গ্রামীণ, তুহিন-এলিট পরিবহণের বাস টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু-সিরাজগঞ্জ রুটে নাটোরে যাওয়া যায়। বাসের ভাড়া খরচ প্রায় ৫৯০ থেকে ১৩০০ টাকা। রেলপথে ঢাকার কমলাপুর থেকে নীলসাগর এক্সপ্রেস, বুড়িমারী এক্সপ্রেস, রংপুর এক্সপ্রেস, একতা এক্সপ্রেস, চিলাহাটি এক্সপ্রেস, দ্রুতযান এক্সপ্রেস, লালমনি এক্সপ্রেস ও পঞ্চগড় এক্সপ্রেস নাটোরে যাওয়া যায়। রেলপথে আসনের ভাড়া প্রায় ৩৭৫ থেকে ১২৮৮ টাকা। নাটোর সদর থেকে বাস বা অটোরিক্সা নিয়ে লালবাজার বা ষ্টেশন বাজারের ভিতরের দোকান থেকে নাটোরের আসল কাঁচাগোল্লা স্বাদ নিতে পারবেন।

নাটোরে থাকার জন্য ভালো সম্ভাবনা রয়েছে। মাদ্রাসা মোড় ও রেলওয়ে ষ্টেশন এলাকায় হোটেল ভিআইপি, হোটেল মিল্লাত, হোটেল প্রিন্স, হোটেল রাজ, হোটেল রুখসানা ও নাটোর বোর্ডিং প্রভৃতি আবাসিক হোটেল রয়েছে।

নাটোরে খাওয়ার স্থান হিসেবে ওয়ান সেভেন হোটেল, হোটেল ফাইভ স্টার, মোল্লা হোটেল এবং ক্যাফে হট ও চিলির মতো রেস্তোরাঁয় পছন্দের খাবার খেতে পারবেন।

নাটোর জেলার অন্যান্য দর্শনীয় স্থান হিসেবে চলনবিল জাদুঘর, চলন বিল, রানী ভবানীর রাজবাড়ী, শহীদ সাগর ও উত্তরা গনভবন উল্লেখযোগ্য।




কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Your Ad Spot